Friday, August 18, 2023

আমি ও সমাজ

 সিগারেটে শেষ টানটা দিয়ে অবশিষ্টটা ফুটপাথে ছুড়ে ফেলল ইশতিয়াক । তারপর একটু দ্রুত এগিয়ে গিয়ে সেই আগুনের ফুলকি জ্বলতে থাকা অবশিষ্টাংশ পা দিয়ে মাড়িয়ে দিলো ও।


সিগারেটে খুব অভ্যাস নেই ইশতিয়াকের। তাই এখন মাথাটা খুব ঝিম ঝিম করছে। হাটতেও কষ্ট হচ্ছে কিছুটা। কোথাও বসে পড়লে ভালো হতো। কিন্তু না। এই রাতের বেলা ফুতপাথে বসে থাকার থেকে আরো পাঁচ মিনিট হেটে মেস পর্যন্ত যেতে পারলে সারাদিন বাইরে থাকা ক্লান্ত শরীরটাকে একটু এলিয়ে দেওয়া যাবে।



খুব কান্না পাচ্ছে। একটা তরুণকে কি কান্না শোভা পায়?
ও জানে না, পায় কি না। কিন্তু একটুকু জানে, কান্না করতে করতে যখন ক্লান্ত হয়ে যায়, তখন একটু হলেও হৃদয়ের আগুনটা দমে।

সিগারেটের আগুন অনেক ভাবে নিভানো যায়। পা দিয়ে মাড়িয়ে, পানি ঢেলে দিয়ে।
কিন্তু হৃদয়ের অঙ্গার কিভাবে নিভাবে ও? মেয়েটাকে ভোলার জন্য নিজের মনের উপর অত্যাচার কম করেনি। পিষেছে নিজেকে প্রতিদিন, কই কিচ্ছু লাভ তো হয়নি? কান্নার জল ও ঢেলেছে অনেক, তাতেও কিছু হয়নি।

অনেকের কাছে, অনেক গল্পে পড়েছে ও, প্রথম প্রেম নাকি ভোলা যায় না, প্রথম প্রেম নাকি হেন হয় না তেন হয় না। কিন্তু এগুলোর মানে টা আগে কখনোই বুঝতে পারে নি ইশতিয়াক।
মানুষের ভাষার সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হলো আবেগকে একদম পুরোপুরিভাবে কখনোই প্রকাশ করা যায় না শব্দ দিয়ে। কে জানে, বড় কবি সাহিত্যিকরা হয়তো পারেন।

যে রাস্তাদিয়ে যাচ্ছে ও এখন সেটা ভাঙা ও খানাখন্দে ভর্তি। রাস্তার সংস্কার কাজ চলছে, রাস্তাটিকে নতুন করে তৈরি করা হবে। রাস্তার সমস্ত ত্রুটি সংশোধন করা হবে।
যদি সব কিছুকেই এভাবে সংস্কার করা যেতো তাহলে ওর সমাজকে একটু সংস্কার করত ইশতিয়াক । কথাগুলো একটু ক্ষোভের সাথেই ভাবে আমি

এমন সমাজের কোন মানে হয় না, যেখানে একটা ছেলে ও একটা মেয়ে পরষ্পরকে ভালোবাসে কিন্তু তারা দুঃখের গন্ডি পেরিয়ে সুখের স্বপ্নটুকু দেখতে পারে না সমাজের ভয়ে। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী হওয়ায় মেয়েটা তার ইচ্ছেগুলো বলি দেয় বাবার অপমানের কথা ভেবে। ধর্ম ও সমাজের গন্ডিতে বাঁধা সমাজের মূল্য খুঁজতে থাকে ছেলেটা।

মেস এর কাছে চলে এসেছে ইশতিয়াক। ভাবনাগুলো বাদ দিয়ে আজ রাতে অন্তত একটু ঘুমাতে চায় ও। ও হ্যা, ধূমপানবিদ্বেষী একটা ছেলের মুখে সিগারেটের গন্ধ মেসের কেও টের পেলে ব্যাপারটা ভালো হবে না। সমাজ খারাপ বলবে!

পকেট থেকে একটা "সেন্টার ফ্রেশ" বের করে মুখে পুরল ও। ভাবনাগুলো এবং সিগারেটের গন্ধ দুটোরই কবর দেওয়ার চেষ্টা।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: